“মিরর রুম”! ঝপ করে মনে পড়ে গেল সেই স্মৃতি , ১৯৮০ সাল ….মা বাবির চিন্তা কোথায়
স্কুলে ভর্তি হব। নির্দিষ্ট দিন “হোলি চাইল্ড ” এর বিশাল ধূসর-কালোর এর গেট পেরিয়ে এসে দাঁড়ালাম মিরর রুম এর বাইরের শ্বেত পাথরের সিঁড়িতে । কিছুক্ষণ পরে ডাক পড়ল। সাদা ড্রেস পরে একজন সিস্টার এগিয়ে এলেন আর আমাকে নিয়ে চললেন “মিরর রুম ” পার করে , কাঠের সিঁড়ি দিয়ে উঠেই যে ক্লাসটা ছিল সেখানে। উনি ছিলেন সিস্টার লিলিয়ান আর ক্লাসে বসে ছিলেন রাজলক্ষ্মীদি । এডমিশন টেস্ট এর পুরোটা না মনে থাকলেও, কিছু কিছু মনে আছে। কিছু আলফাবেট দেখিয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল সেইগুলো , কিছু পাখির ছবি দেখিয়ে নাম বলতে বলা হয়েছিল আর জিজ্ঞাসা করেছিলেন কোনটা সব থেকে প্রিয়। আমি বলেছিলাম পিকক । সব থেকে উত্তেজনার ব্যাপার ছিল আমাকে কিছু দেশলাই কাঠি দিয়ে বলা হয়েছিল একটা বাড়ি বানাতে টেবিলের ওপর ।দাদু র সাথে বাড়িতে এই দেশলাই কাঠি নিয়ে খেলাটা খুব প্রিয় ছিল বলে নিমেষে বানিয়ে ফেলেছিলাম । সেটা দেখে দিদি খুব অবাক হয়েছিলেন আর ক্লাস ১ এ যাওয়ার পরে বেশ কিছু দিন “এই দেশলাই কাঠি মেয়ে বলে ডাকতেন ..”
ক্লাস ২ এ তে পড়ি তখন , স্কুল কম্পাউন্ড এর পাশের ক্লাস , একদিন এই সকাল ১১টা নাগাদ আমি আর রুবাই যাচ্ছিলাম টিচার`স রুম এ কিছু খাতা রাখতে , হঠাৎ একটি বড় দিদি বলল শিগগির ক্লাসে ফিরে যা আর বল টিচারকে ইন্দিরা গান্ধী মারা গেছেন্, স্কুল ছুটি হয়ে যাবে ….পড়ি মরি করে দুজনে ক্লাসে গিয়ে বললাম। নীতাদি ছিলেন ক্লাসে। সিস্টার রোমানার কাছে খবরের সত্যতা যাচাই করে ফিরে এসে আমাদের বললেন ব্যাগ গুছিয়ে তৈরী হয়ে থাকতে। ধীরে ধীরে দেখলাম বাবা-মা-রা আসতে শুরু করেছেন, এবং অত্যন্ত অবাক হয়ে হঠাৎ দেখলাম ক্লাস এর দরজাতে আমার বাবি দাঁড়িয়ে যে কিনা কোনো দিন আমাকে স্কুলে দিতে বা নিতে আসে নি তার আগে। (মনে হয় চোখটা দুবার কচলে নিয়েছিলাম ভুল দেখছি ভেবে ) আমাকে তো ডেকে নিলোই ,তার সাথে আমার দুই বন্ধু ইরিনা আর মৌ (বাকি সবার মানালি, কিন্তু আমার কাছে সেই মৌ এ রয়ে গেছে )। ভীষণ উত্তেজনা , বন্ধুদের সাথে বাড়ি যাচ্ছি ।তাও কিনা বাস ট্রাম বন্ধ , হেঁটে হেঁটে ….সাহিত্য পরিষদ অবধি এসে সামনে একটা রিকশা পাওয়া গেলো , বাবি আমাদের তিনজনকে উঠিয়ে দিল আর পাশে পাশে হেঁটে চললো। খান্না র কাছে একদল ছেলে অবরোধ করলো , বাবি তাদের বুঝিয়ে বললো খালি আমার মেয়েরা ক্লাস ২ তে পড়ে , ওদের ছেড়ে দাও আমি তো হেঁটে যাচ্ছি । তারা তখন বলল বড় রাস্তা ছেড়ে গলি দিয়ে যেতে তাহলে ঝামেলা কম হবে …রিক্সাওয়ালা ও তখন নানা গলিঘুঁজি দিয়ে গিয়ে অবশেষে শ্যামবাজার পৌঁছলো । সেখানে দেখা হলো আমার আম্মা আর মার সাথে যারা যাচ্ছিল আমাকে স্কুল থেকে তুলতে। রিকশা কে ওখানে ছেড়ে দিতে হল, আর যেতে দিল না বলে । বাকি রাস্তা আমরা মহা আনন্দে হেঁটে এলাম, বেলগাছিয়া থেকে বাবি গেলো পাইকপাড়া তে ইরিনা আর মৌকে ছাড়তে আর আমি আম্মা আর মাএর সাথে বাড়ি চলে গেলাম। বড় স্মৃতি মধুর এই সব টুকরো টুকরো ঘটনা গুলো ….
স্কুলে গিয়ে অনেক অনেক নতুন কাকু কাকিমা র সাথে বন্ধুত্ব হয়েছিল যাদের কথা না বললে এই স্মৃতি চারণ কমপ্লিট হবে না …. তার মধ্যে কিছু জন হলেন : বাবলু কাকিমা আর পুলক কাকু (ইরিনা র মা বাবা ), নমিতা কাকিমা আর কাকু ( মৌ এর মা বাবা ), পারমিতা চক্রবর্তী র মা বাবা ,কৃষ্ণা কাকিমা আর কাকু ( ঋতু র বাবা মা ), শাশ্বতী সেনগুপ্তর মা বাবা , বিশাখার মা , শর্মিলার মা , পারমিতা রুদ্রর মা , পারমিতা ঘোষের মা , দিশারীর মা , শ্রীজাতার বাবা , পূর্বাশার মা -বাবা , সায়ন্তনীর মা - বাবা , সুতপার বাবা ,মৈত্রেয়ী সিকদারের মা , মধুরিমার মা বাবা ….আরও অনেকে …..দূরে থাকলেও মাঝে মাঝে এঁদের কথা খুব মনে পড়ে আর মনটা বড্ড ভারাক্রান্ত হয়ে যায়…
স্কুলে ভর্তি হব। নির্দিষ্ট দিন “হোলি চাইল্ড ” এর বিশাল ধূসর-কালোর এর গেট পেরিয়ে এসে দাঁড়ালাম মিরর রুম এর বাইরের শ্বেত পাথরের সিঁড়িতে । কিছুক্ষণ পরে ডাক পড়ল। সাদা ড্রেস পরে একজন সিস্টার এগিয়ে এলেন আর আমাকে নিয়ে চললেন “মিরর রুম ” পার করে , কাঠের সিঁড়ি দিয়ে উঠেই যে ক্লাসটা ছিল সেখানে। উনি ছিলেন সিস্টার লিলিয়ান আর ক্লাসে বসে ছিলেন রাজলক্ষ্মীদি । এডমিশন টেস্ট এর পুরোটা না মনে থাকলেও, কিছু কিছু মনে আছে। কিছু আলফাবেট দেখিয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল সেইগুলো , কিছু পাখির ছবি দেখিয়ে নাম বলতে বলা হয়েছিল আর জিজ্ঞাসা করেছিলেন কোনটা সব থেকে প্রিয়। আমি বলেছিলাম পিকক । সব থেকে উত্তেজনার ব্যাপার ছিল আমাকে কিছু দেশলাই কাঠি দিয়ে বলা হয়েছিল একটা বাড়ি বানাতে টেবিলের ওপর ।দাদু র সাথে বাড়িতে এই দেশলাই কাঠি নিয়ে খেলাটা খুব প্রিয় ছিল বলে নিমেষে বানিয়ে ফেলেছিলাম । সেটা দেখে দিদি খুব অবাক হয়েছিলেন আর ক্লাস ১ এ যাওয়ার পরে বেশ কিছু দিন “এই দেশলাই কাঠি মেয়ে বলে ডাকতেন ..”
ক্লাস ২ এ তে পড়ি তখন , স্কুল কম্পাউন্ড এর পাশের ক্লাস , একদিন এই সকাল ১১টা নাগাদ আমি আর রুবাই যাচ্ছিলাম টিচার`স রুম এ কিছু খাতা রাখতে , হঠাৎ একটি বড় দিদি বলল শিগগির ক্লাসে ফিরে যা আর বল টিচারকে ইন্দিরা গান্ধী মারা গেছেন্, স্কুল ছুটি হয়ে যাবে ….পড়ি মরি করে দুজনে ক্লাসে গিয়ে বললাম। নীতাদি ছিলেন ক্লাসে। সিস্টার রোমানার কাছে খবরের সত্যতা যাচাই করে ফিরে এসে আমাদের বললেন ব্যাগ গুছিয়ে তৈরী হয়ে থাকতে। ধীরে ধীরে দেখলাম বাবা-মা-রা আসতে শুরু করেছেন, এবং অত্যন্ত অবাক হয়ে হঠাৎ দেখলাম ক্লাস এর দরজাতে আমার বাবি দাঁড়িয়ে যে কিনা কোনো দিন আমাকে স্কুলে দিতে বা নিতে আসে নি তার আগে। (মনে হয় চোখটা দুবার কচলে নিয়েছিলাম ভুল দেখছি ভেবে ) আমাকে তো ডেকে নিলোই ,তার সাথে আমার দুই বন্ধু ইরিনা আর মৌ (বাকি সবার মানালি, কিন্তু আমার কাছে সেই মৌ এ রয়ে গেছে )। ভীষণ উত্তেজনা , বন্ধুদের সাথে বাড়ি যাচ্ছি ।তাও কিনা বাস ট্রাম বন্ধ , হেঁটে হেঁটে ….সাহিত্য পরিষদ অবধি এসে সামনে একটা রিকশা পাওয়া গেলো , বাবি আমাদের তিনজনকে উঠিয়ে দিল আর পাশে পাশে হেঁটে চললো। খান্না র কাছে একদল ছেলে অবরোধ করলো , বাবি তাদের বুঝিয়ে বললো খালি আমার মেয়েরা ক্লাস ২ তে পড়ে , ওদের ছেড়ে দাও আমি তো হেঁটে যাচ্ছি । তারা তখন বলল বড় রাস্তা ছেড়ে গলি দিয়ে যেতে তাহলে ঝামেলা কম হবে …রিক্সাওয়ালা ও তখন নানা গলিঘুঁজি দিয়ে গিয়ে অবশেষে শ্যামবাজার পৌঁছলো । সেখানে দেখা হলো আমার আম্মা আর মার সাথে যারা যাচ্ছিল আমাকে স্কুল থেকে তুলতে। রিকশা কে ওখানে ছেড়ে দিতে হল, আর যেতে দিল না বলে । বাকি রাস্তা আমরা মহা আনন্দে হেঁটে এলাম, বেলগাছিয়া থেকে বাবি গেলো পাইকপাড়া তে ইরিনা আর মৌকে ছাড়তে আর আমি আম্মা আর মাএর সাথে বাড়ি চলে গেলাম। বড় স্মৃতি মধুর এই সব টুকরো টুকরো ঘটনা গুলো ….
স্কুলে গিয়ে অনেক অনেক নতুন কাকু কাকিমা র সাথে বন্ধুত্ব হয়েছিল যাদের কথা না বললে এই স্মৃতি চারণ কমপ্লিট হবে না …. তার মধ্যে কিছু জন হলেন : বাবলু কাকিমা আর পুলক কাকু (ইরিনা র মা বাবা ), নমিতা কাকিমা আর কাকু ( মৌ এর মা বাবা ), পারমিতা চক্রবর্তী র মা বাবা ,কৃষ্ণা কাকিমা আর কাকু ( ঋতু র বাবা মা ), শাশ্বতী সেনগুপ্তর মা বাবা , বিশাখার মা , শর্মিলার মা , পারমিতা রুদ্রর মা , পারমিতা ঘোষের মা , দিশারীর মা , শ্রীজাতার বাবা , পূর্বাশার মা -বাবা , সায়ন্তনীর মা - বাবা , সুতপার বাবা ,মৈত্রেয়ী সিকদারের মা , মধুরিমার মা বাবা ….আরও অনেকে …..দূরে থাকলেও মাঝে মাঝে এঁদের কথা খুব মনে পড়ে আর মনটা বড্ড ভারাক্রান্ত হয়ে যায়…
স্কুলের দিদিদের কথা না বললে তো এই লেখা শেষ করা যাবে না। ওঁদের স্নেহাশিস
, আশীর্বাদ ছাড়া আজ এইখানে এসে পৌঁছতে পারতাম না । স্কুল জীবন এর দিনগুলোর প্রতিটা
ছোট ছোট মুহূর্ত সব বন্ধুদের সাথে যেমন জড়িয়ে আছে তেমনি ওঁদের সাথেও ওতপ্রোত ভাবে
মিশে আছে । আজ অনেক দিদিরা আমাদের মধ্যে নেই , ওঁদের আত্মার শান্তি কামনা করি । যারা
আছেন তারা যেন ভালো থাকেন সুস্থ থাকেন ।
আজ আমাদের স্কুল আরও অনেক ডেভেলপ করেছে , সুনাম এখনো অক্ষুণ্ণ আছে । আমার স্কুল , সেই শান বাঁধানো উঠোন , নিম গাছ , সবেদা গাছ , স্কুলের হল- যেখানে মাধ্যমিকের পিটি পরীক্ষা দিয়েছিলাম , স্কুল স্টেজ যেখানে অরুণ -বরুণ কিরণমালাতে অভিনয় করেছিলাম ক্লাস ৫ এ , রাস্তার ধার দিয়ে সরু সিঁড়ি দিয়ে ক্লাসে যাওয়ার সময় মাকে লাস্ট টাইম হাত নাড়া , স্কুল চ্যাপেল যেখানে ভারাক্রান্ত মন কে শান্তকরতে যেতাম , স্কুলের ছাদ যেখানে শেষ দিন বন্ধুদের সাথে কাটিয়েছিলাম ….সব্বাই খুব ভাল থেকো ।
আজ আমাদের স্কুল আরও অনেক ডেভেলপ করেছে , সুনাম এখনো অক্ষুণ্ণ আছে । আমার স্কুল , সেই শান বাঁধানো উঠোন , নিম গাছ , সবেদা গাছ , স্কুলের হল- যেখানে মাধ্যমিকের পিটি পরীক্ষা দিয়েছিলাম , স্কুল স্টেজ যেখানে অরুণ -বরুণ কিরণমালাতে অভিনয় করেছিলাম ক্লাস ৫ এ , রাস্তার ধার দিয়ে সরু সিঁড়ি দিয়ে ক্লাসে যাওয়ার সময় মাকে লাস্ট টাইম হাত নাড়া , স্কুল চ্যাপেল যেখানে ভারাক্রান্ত মন কে শান্তকরতে যেতাম , স্কুলের ছাদ যেখানে শেষ দিন বন্ধুদের সাথে কাটিয়েছিলাম ….সব্বাই খুব ভাল থেকো ।
খুব ভাল থেকো
গো!
No comments:
Post a Comment