আজ লিখতে বসেছি ২৫ বছর আগের ফেলে আসা
আমার শিশু থেকে কিশোর জীবনে পা রাখার অন্যতম প্রধান বিশ্বস্ত সাক্ষী আমার প্রিয় স্কুল "হোলি চাইল্ড ইনস্টিটিউট"।
আজ স্মৃতির সরণীতে পা রেখে ফিরে তাকাতেই ছেঁড়া পালের মতো টুকরো টুকরো অজস্র ঘটনা আমার মনের গভীর থেকে উঠে এসে যেন আমার সমগ্র গুরুমস্তিষ্ককে আচ্ছাদিত করে দিচ্ছে - মনে পড়ছে সেই প্রথম দিন স্কুলে যাবার কিছু কথা তখন মনে হয় বছর তিন কি সাড়ে তিন বছর হবে,সকাল বেলায় বাবা মায়ের হাত ধরে সাদা ফ্রক, চুলে সাদা ফিতে পায়ে সাদা জুতো পরে গিয়ে পৌঁছোলাম সেই বিখ্যাত গেটের সামনে - গেটের ভিতর দিয়ে গুটিগুটি পায়ে ঢুকে ভীতু চোখে চারিপাশ তাকিয়ে দেখছি এ তো এক বিশাল অট্টালিকা। ওপরে ওঠার ৫/৬ টা ডিজাইন করা নানান সিঁড়ি , কোনো এক একটা সিঁড়ির সামনে বিশাল বড়ো বড়ো ফটোফ্রেম দু হাতে ক্রুশবিদ্ধ যীশু অথবা মা মেরির ফটো , খুঁজে পেলাম এক মজার মিরর রুম , সুদৃশ্য গির্জা ইত্যাদি ইত্যাদি । এতসব কিছুর মাঝে তখনতো আমার প্রায় কাঁদো কাঁদো অবস্থা পাছে নিজেকে হারিয়ে ফেলি এই গোলোকধাঁধার ভিতর। সেদিন মনে হয়েছিল এটা যেন এক বন্দীশালা। প্রথম দিন থেকেই আমাদের শেখানো হয়েছিল ক্লাস শুরুর আগে assembly হয় যেখানে নিয়মিত সংবাদপাঠ হত , গান হত । সেই assembly তেই প্রথম দেখলাম সিস্টারদের। প্রথম দর্শনে একটু ভয় পেয়েছিলাম ঠিকই কিন্তু ক্লাস করতে করতে কখন জানিনা সিস্টারদের স্নেহের জালে জড়িয়ে গেলাম - ধীরে ধীরে ভালোবাসতে শুরু করলাম। সিস্টারদের কথা বলতে গেলেই প্রথমেই মনে পড়ে - Sister Romana , Sister Angela , Sister Lilian এদের কথা। বিশেষভাবে class X এর আগে অবধি যদি আমাকে কেউ জিজ্ঞাসা করত ,তুমি কাকে ভয় পাও ? এক পলক না ভেবেই যে নামটা বেরিয়ে আসত সিস্টার রোমানা - উনি আমাদের Headmistress ছিলেন - ওনার মতো personality সম্পন্ন মহিলা আমার জীবনে খুব কম দেখা। যাঁর শুধুমাত্র উপস্থিতিতেই স্কুলের KG I থেকে Class X সব ছাত্রী চুপ করে যেত। Discipline শব্দটা যেন কোথাও ওঁর সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত ছিল - সামান্য দিদিদের অনুপস্থিতিতে নিজেদের মধ্যে গল্পে মেতে থাকা ক্লাসরুম - শুধুমাত্র দূর থেকে সিস্টার রোমানার উপস্থিতি টের পেলেই ম্যাজিকের মত চুপ হয়ে যেত - অথচ সেই সিস্টার রোমানা Class Xএ যখন আমাদের Physical Sc পড়াতে এলে মুগ্ধ হয়ে শুনেছি ওনার পড়ানো - অসাধারন পড়াতেন। পড়ানোর মাঝেমাঝে নানান ছোট ছোট গল্প বলতেন সেই গল্পের আড়ালে লুকোনো থাকতো আগামী ভবিষ্যৎ জটিল জীবনের উদ্দেশ্যে কিছু উপদেশ - সেদিন সেটা বুঝিনি। বুঝলাম যে দিন নিজে সংসার জীবনের আবর্তে প্রবেশ করলাম । প্রত্যেক মুহুর্তে মনে পড়ত সেই মমতাময়ী মানুষটির কথা - ভাবতাম নিজে জীবনে সংসার না করেও কত সহজে উনি কিন্তু আমাদের অনেক সাংসারিক জীবনের টিপস্ দিতেন কত সহজ করে। বাইরের থেকে মনে হওয়া এক কঠিন প্রস্তরের ভিতরে একজন হৃদয়স্পর্শী মমতাময়ী নারীকে তাই আজও খুব miss করি। আবার Miss করি Sister Angelaর ওই মিষ্টি হাসি - যা দেখে প্রাইমারি সেকশনের ছোট ছোট শিশুগুলো এক অনাবিল আনন্দ খুঁজে পেত। খুব খুব মিস্ করি শিখাদি , নীতাদি , বন্দনাদি , আল্পনাদি , জয়ন্তীদি , আরতিদি - সব্বাই সব্বাইকে ।
আজ ব্যস্ত জীবনে কাজের ফাঁকে যদি কখনো সৌভাগ্য হয় সেই বিরাট অট্টালিকাসম বন্দীশালার পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার , ভিতর থেকে যখন কলধ্বনি ভেসে আসে মনে হয় ছুটে ভিতরে ঢুকে হয়ত পেয়ে যাব আমার ফেলে আসা সেই ছোটবেলার প্রিয় বন্ধুগুলোকে - আবার শুরু করব আড়ি ভাবের খেলা -না না আড়ি আড়ি নয় এবার শুধু ভাব ভাব আর ভাব , ছেড়ে এগিয়ে আসা ২৫টা বছর আমাকে চিনিয়ে দিয়েছে স্কুলের বন্ধুত্ব কত নিষ্পাপ কত পবিত্র - যেখানে কোন স্বার্থ নেই যাদের কাছে আমি শুধুমাত্র ক্ষণিকের প্রয়োজন নই - তারা আমার প্রিয়জন। হঠাৎ সম্বিত ফেরে পিছন থেকে বেজে ওঠা গাড়ীর হর্ণের আওয়াজে - মনে পড়ে আজ তো আমি আর বর্তমান ছাত্রী নই,আমি তো প্রাক্তন। ভাবতে থাকি এই সেই বন্দীশালা যেখানে কাটানো জীবনের মূল্যবান বারোটি বছরের প্রতিটি দিনের হাসি - কান্না , আশা - নিরাশায় ঘেরা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ঘটনা যা আজও সুখের স্মৃতি হিসাবে বিরাজমান। এই বিদ্যালয়ের প্রতিটি দিদি সিস্টারদের কাছ থেকে ভালোবাসার মোড়কে মোড়া কঠোর অনুশাসন - আজও আমাদের জীবনযুদ্ধের অন্যতম হাতিয়ার।
তাই ফিরে দেখা সেই ১২টি বছর যা আজও স্মৃতির মণিকোঠায় চিরউজ্জ্বল হয়ে থাকবে।
আজ স্মৃতির সরণীতে পা রেখে ফিরে তাকাতেই ছেঁড়া পালের মতো টুকরো টুকরো অজস্র ঘটনা আমার মনের গভীর থেকে উঠে এসে যেন আমার সমগ্র গুরুমস্তিষ্ককে আচ্ছাদিত করে দিচ্ছে - মনে পড়ছে সেই প্রথম দিন স্কুলে যাবার কিছু কথা তখন মনে হয় বছর তিন কি সাড়ে তিন বছর হবে,সকাল বেলায় বাবা মায়ের হাত ধরে সাদা ফ্রক, চুলে সাদা ফিতে পায়ে সাদা জুতো পরে গিয়ে পৌঁছোলাম সেই বিখ্যাত গেটের সামনে - গেটের ভিতর দিয়ে গুটিগুটি পায়ে ঢুকে ভীতু চোখে চারিপাশ তাকিয়ে দেখছি এ তো এক বিশাল অট্টালিকা। ওপরে ওঠার ৫/৬ টা ডিজাইন করা নানান সিঁড়ি , কোনো এক একটা সিঁড়ির সামনে বিশাল বড়ো বড়ো ফটোফ্রেম দু হাতে ক্রুশবিদ্ধ যীশু অথবা মা মেরির ফটো , খুঁজে পেলাম এক মজার মিরর রুম , সুদৃশ্য গির্জা ইত্যাদি ইত্যাদি । এতসব কিছুর মাঝে তখনতো আমার প্রায় কাঁদো কাঁদো অবস্থা পাছে নিজেকে হারিয়ে ফেলি এই গোলোকধাঁধার ভিতর। সেদিন মনে হয়েছিল এটা যেন এক বন্দীশালা। প্রথম দিন থেকেই আমাদের শেখানো হয়েছিল ক্লাস শুরুর আগে assembly হয় যেখানে নিয়মিত সংবাদপাঠ হত , গান হত । সেই assembly তেই প্রথম দেখলাম সিস্টারদের। প্রথম দর্শনে একটু ভয় পেয়েছিলাম ঠিকই কিন্তু ক্লাস করতে করতে কখন জানিনা সিস্টারদের স্নেহের জালে জড়িয়ে গেলাম - ধীরে ধীরে ভালোবাসতে শুরু করলাম। সিস্টারদের কথা বলতে গেলেই প্রথমেই মনে পড়ে - Sister Romana , Sister Angela , Sister Lilian এদের কথা। বিশেষভাবে class X এর আগে অবধি যদি আমাকে কেউ জিজ্ঞাসা করত ,তুমি কাকে ভয় পাও ? এক পলক না ভেবেই যে নামটা বেরিয়ে আসত সিস্টার রোমানা - উনি আমাদের Headmistress ছিলেন - ওনার মতো personality সম্পন্ন মহিলা আমার জীবনে খুব কম দেখা। যাঁর শুধুমাত্র উপস্থিতিতেই স্কুলের KG I থেকে Class X সব ছাত্রী চুপ করে যেত। Discipline শব্দটা যেন কোথাও ওঁর সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত ছিল - সামান্য দিদিদের অনুপস্থিতিতে নিজেদের মধ্যে গল্পে মেতে থাকা ক্লাসরুম - শুধুমাত্র দূর থেকে সিস্টার রোমানার উপস্থিতি টের পেলেই ম্যাজিকের মত চুপ হয়ে যেত - অথচ সেই সিস্টার রোমানা Class Xএ যখন আমাদের Physical Sc পড়াতে এলে মুগ্ধ হয়ে শুনেছি ওনার পড়ানো - অসাধারন পড়াতেন। পড়ানোর মাঝেমাঝে নানান ছোট ছোট গল্প বলতেন সেই গল্পের আড়ালে লুকোনো থাকতো আগামী ভবিষ্যৎ জটিল জীবনের উদ্দেশ্যে কিছু উপদেশ - সেদিন সেটা বুঝিনি। বুঝলাম যে দিন নিজে সংসার জীবনের আবর্তে প্রবেশ করলাম । প্রত্যেক মুহুর্তে মনে পড়ত সেই মমতাময়ী মানুষটির কথা - ভাবতাম নিজে জীবনে সংসার না করেও কত সহজে উনি কিন্তু আমাদের অনেক সাংসারিক জীবনের টিপস্ দিতেন কত সহজ করে। বাইরের থেকে মনে হওয়া এক কঠিন প্রস্তরের ভিতরে একজন হৃদয়স্পর্শী মমতাময়ী নারীকে তাই আজও খুব miss করি। আবার Miss করি Sister Angelaর ওই মিষ্টি হাসি - যা দেখে প্রাইমারি সেকশনের ছোট ছোট শিশুগুলো এক অনাবিল আনন্দ খুঁজে পেত। খুব খুব মিস্ করি শিখাদি , নীতাদি , বন্দনাদি , আল্পনাদি , জয়ন্তীদি , আরতিদি - সব্বাই সব্বাইকে ।
আজ ব্যস্ত জীবনে কাজের ফাঁকে যদি কখনো সৌভাগ্য হয় সেই বিরাট অট্টালিকাসম বন্দীশালার পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার , ভিতর থেকে যখন কলধ্বনি ভেসে আসে মনে হয় ছুটে ভিতরে ঢুকে হয়ত পেয়ে যাব আমার ফেলে আসা সেই ছোটবেলার প্রিয় বন্ধুগুলোকে - আবার শুরু করব আড়ি ভাবের খেলা -না না আড়ি আড়ি নয় এবার শুধু ভাব ভাব আর ভাব , ছেড়ে এগিয়ে আসা ২৫টা বছর আমাকে চিনিয়ে দিয়েছে স্কুলের বন্ধুত্ব কত নিষ্পাপ কত পবিত্র - যেখানে কোন স্বার্থ নেই যাদের কাছে আমি শুধুমাত্র ক্ষণিকের প্রয়োজন নই - তারা আমার প্রিয়জন। হঠাৎ সম্বিত ফেরে পিছন থেকে বেজে ওঠা গাড়ীর হর্ণের আওয়াজে - মনে পড়ে আজ তো আমি আর বর্তমান ছাত্রী নই,আমি তো প্রাক্তন। ভাবতে থাকি এই সেই বন্দীশালা যেখানে কাটানো জীবনের মূল্যবান বারোটি বছরের প্রতিটি দিনের হাসি - কান্না , আশা - নিরাশায় ঘেরা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ঘটনা যা আজও সুখের স্মৃতি হিসাবে বিরাজমান। এই বিদ্যালয়ের প্রতিটি দিদি সিস্টারদের কাছ থেকে ভালোবাসার মোড়কে মোড়া কঠোর অনুশাসন - আজও আমাদের জীবনযুদ্ধের অন্যতম হাতিয়ার।
তাই ফিরে দেখা সেই ১২টি বছর যা আজও স্মৃতির মণিকোঠায় চিরউজ্জ্বল হয়ে থাকবে।
No comments:
Post a Comment