Wednesday, November 14, 2018

আমার স্কুল --- সায়ন্তনী সাউ

নীল স্কার্ট আর সাদা টপ, টাইট করে বিনুনি আর সাদা ফিতে। তিন বোন, মায়ের সাথে হাটা, ট্রাম তারপর স্কুলে আসা। সেদিন মার মুখে বেশ একটা স্বস্তির হাসি। মার ইচ্ছে ছিল সব থেকে বেশি, তিন বোন একসাথে হোলি চাইল্ড এ যাবে। যাবে বলে ক্লাস সেভেনে, সব কিছুর তো একটা ইয়ে থাকে নাকি। তখন আমি বড় দিদি, আবার ক্লাস সেভেন। অনেক চেষ্টা করেছিলাম যাতে ওই দিন টা না আসে। সত্যি বলছি, চার পাঁচ টা প্রশ্ন ইচ্ছে করে ছেড়ে দিয়েও ...... শেষ রক্ষা করতে আর পারলাম কৈ। মা কে কিন্তু এখনও এটা বলা হয নি। এই বয়সে পিঠে দু চারটে পড়লে ও পড়তে পারে। ছোট বোন বেশ সিনিয়র দিদি দের মত এটা ওটা বলে চলে গেল ( চিরকাল একটা গম্ভীর ভাব ওটার ) । চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলাম আমি আর আমার মেজো বোন । আমি ক্লাস সেভেন , মেজো বোন ক্লাস সিক্স । মনে হচ্ছিল সবাই আমাদেরকে দেখছে । স্কুল বিল্ডিং টা বড্ড ভালো লেগে গিয়েছিল সেই অনেক দিন আগেই, সেও যেন ড্যাবড্যাব করে দেখছে আমাকে। আমার পেটের মধ্যে তখন না জানি কত কি একসাথে লাফালাফি শুরু করে দিয়েছে । নীচের থেকে অনেক গুলো বুদবুদ লাফালাফি করে গলার কাছে এসে পটাপট ফাটছে ।গলার কাছে দলা পাকানো কি যেন একটা, কান্না বলা যেতো কিনা জানি না কিন্তু চোখ টা ও ফাঁক বুঝে একটু যেন জ্বালা করে উঠছিল। মনে মনে মা বাবার ওপর অসম্ভব একটা রাগ হচ্ছিল । কোন দরকার ছিল কি স্কুল টা পাল্টানোর? কিন্তু আর ভেবে কি হবে। আসে পাশে সবাই একবার করে একটা অদ্ভুত দৃষ্টি (যেন aliens গোছের কাউকে দেখছে) দিয়ে চলে যাচ্ছে । যদিও চিরকাল ই আমার একটা হাঁদা ভোদা মঙ্গলিযান গোছের চেহারা, সেদিন কিছুটা alian টাচ এলেও আসতে পারে । মনে হচ্ছিল ঘন্টা টা কেন পড়ছে না। 
না, অপেক্ষার অবসান ঘটল, ঘন্টা পড়ল । ব্যাস, এবার কি করবে কর। চারিদিকে দৌড় দৌড়ি, লাইন বানানোর । আমি, বোন আর কয়েক জন এক ভাবে পিছন দিকে দাঁড়িয়ে রইলাম । শুধু একটা চেনা মুখ, মৌমিতা মুখার্জি আর বাকি একজনকে admission test এর দিন দেখেছি । একজন দিদি এগিয়ে এসে সব কিছু জানলেন আর ওখানেই দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে বললেন । 
ভীষণ ভয় লাগা সত্তেও পুরো assembly টা খুব ভালো লাগল । আসলে এতো সুন্দর আর সম্পূর্ণ ভাবে যে প্রার্থনা হতে পারে তা আগে আমার জানাই ছিল না। সব কিছুর পর একজন এগিয়ে এলেন, মুখে একটা অদ্ভুত মৃদ হাসি । কি অসম্ভব সুন্দর ভাবে কথা বললেন, মনের মধ্যে হতে থাকা অনেক প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দিলেন, টের পেলাম বুকের ধুকপুকানি টা যেন অনেকটা কমে গেছে। পরে নাম জেনেছিলাম, সিস্টার রোমানা । স্কুলের হেড টিচার মানে প্রিন্সিপাল এ রকম হয় নাকি ? আমি তো আগে জানতাম না। জানতাম ভীষণ শক্ত স্কুল, পড়াশুনোর খুব চাপ। জানতাম এই স্কুলের মাধ্যমিক এর রেজাল্ট দারুণ ভালো হয় । জানা যেটা ছিল না তা হল অসম্ভব ভালো সম্পর্ক ছাত্রীদের সাথে দিদি দের, এক অদ্ভুত ব্যালান্স ভালবাসা আর শক্ত হাতে শাসন করার মধ্যে । আর আমি খুব বেশি করে সেটা বুঝতে পারতাম অন্য স্কুল থেকে আসার জন্য । 
ভালো লাগা মাত্র চার বছর কাটিয়েছি স্কুলে, অনেক ভালো মানুষের সন্ধান পেয়েছি এই স্কুলে এসে। ছোট ছোট অনেক অনুভূতি, ভালো লাগা ভরিয়ে দিয়েছে মনকে । আলাদা করে কোন বন্ধু বা দিদিদের নাম নেব না, প্রত্যেকের সাথে প্রচুর ভালো স্মৃতি এখনও তরতাজা হয়ে আছে । ভালো ছাত্রী হয়তো হতে পারিনি কিন্তু ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য স্কুলের অবদান অনস্বীকার্য ।
তাই আজ 25বছর পরে অনেক সাহস জুগিয়ে আমার এই ভালো লাগা টুকু, উল্টো পাল্টা ভাবে হলেও লিখে ফেললাম ।

No comments:

Post a Comment

স্বাগতম্

প্রিয় বন্ধুরা, হেদুয়ার   পাশ   ধরে ,  বসন্ত   কেবিনের   গা   ঘেঁষে   যে   রাস্তাটা   চলে   গেছে ,  আমার   বেওয়ারিশ   ছোটবেলাটা   সে...